বৃহস্পতিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৩ | ০২-৮৩১৭২০৯ |

মাঠ প্রশাসনে করোনা আক্রান্ত ১০৭ জন

মাঠ প্রশাসনে করোনা আক্রান্ত ১০৭ জন
Covid-19

করোনা দুর্যোগ মোকাবিলায় সামাজিক দূরত্ব ও হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত এবং মৃত ব্যক্তির দাফন ও ত্রাণ বিতরণসহ বিভিন্ন প্রত্যক্ষ কাজ করতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। ডিসি, এডিসি, ইউএনও, এসিল্যান্ড ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ মাঠ প্রশাসনের ১০৭ কর্মকর্তা-কর্মচারী এ পর্যন্ত এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।

শুধু এই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নন, তাদের এই ঝুঁকিপূর্ণ দায়িত্বের কারণে তাদের আত্মীয়স্বজনও আক্রান্ত হচ্ছেন কিংবা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রশাসন ক্যাডারের ২১ কর্মকর্তা আক্রান্ত হয়েছেন, যাদের একজন মারাও গেছেন। কর্মচারী আক্রান্ত হয়েছেন ৮৬ জন। তাদের মধ্যে জেলা প্রশাসনের দু'জন অকালে মারা গেছেন। আক্রান্তদের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলায় চারজন, নরসিংদীতে সাতজন, কিশোরগঞ্জ, গাজীপুর, চাঁদপুর ও চট্টগ্রামে একজন করে, সৌদি আরবে একজন এবং দুদকের একজন কর্মকর্তা মারা গেছেন। সারাদেশে করোনায় আক্রান্তদের ৮৪ ভাগই ঢাকা মহানগর ও ঢাকা বিভাগের। ফলে এ বিভাগে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে কাজ করছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। বর্তমানে সারাদেশে ৪৮৬ জন ইউএনও রয়েছেন। এদের মধ্যে ১৪০ জন ইউএনও নারী। এ ছাড়া আট জেলায় নারী কর্মকর্তারা জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছেন। তারাও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। প্রায় প্রতিটি উপজেলায় সহকারী কমিশনারও (ভূমি) আছেন। বর্তমানে মাঠ প্রশাসনে তাদের কাজের পরিধি বেশি। ইউনিয়ন পর্যায়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ইউএনওদের সব কাজের সমন্বয় করতে হচ্ছে। তারা প্রতিটি ইউনিয়নে গিয়ে তালিকা করছেন এবং করোনাভাইরাস মোকাবিলার পাশাপাশি অসহায় মানুষের ত্রাণ সহায়তা নিশ্চিত করছেন। এমন অবস্থাও হয়েছে যে, একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) করোনার লক্ষণ নিয়ে মৃত ব্যক্তির জানাজা পড়াতেও হয়েছে। আবার জ্বর, ঠাণ্ডায় আক্রান্ত এক বৃদ্ধাকে আত্মীয়স্বজনরা ফেলে রেখে গেলে তার ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নিতে হয়েছে একজন সহকারী কমিশনারকে (ভূমি)। এর মধ্যে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর উদ্যোগে মেহেরপুর জেলা প্রশাসনে ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল সার্ভিস চালু হয়েছে। বেশকিছু এলাকায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রোধে চালু হয়েছে ভ্রাম্যমাণ বাজার। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সমকালকে বলেন, করোনাভাইরাসের শুরু থেকে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সম্মুখভাগে কাজ করতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকজন কর্মকর্তা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মাস্ক ও গ্লাভসসহ নিরাপদ পোশাক পরে ও নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করতে বলা হয়েছে। তাদের সুরক্ষা সামগ্রী কেনার জন্য আলাদা অনুদান দেওয়া হয়েছে। কারণ তারা অসুস্থ হলে কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়বে। বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সমকালকে বলেন, মাঠ প্রশাসনের সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মানুষকে নিরাপদে ঘরে রাখা, লকডাউন বাস্তবায়ন করা। সেনা ও পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে জরিমানাসহ নানা কলাকৌশলে তারা এ কঠিন কাজটি করছেন। লকডাউন নিশ্চিত করতে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পিপিই ছাড়াই সরাসরি সাধারণ মানুষের খুব কাছে যেতে হচ্ছে। বেশ কয়েকজন ডিসি-ইউএনও সমকালকে বলেন, লকডাউন নিশ্চিত করা, করোনা রোগী ও তার স্বজনকে খাবার পৌঁছে দেওয়া, এমনকি করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের দাফন করাতেও ভূমিকা রাখছেন তারা। এসব কাজ করতে গিয়ে নানামুখী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের। মফস্বলে হাটবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে মানুষের বেশ উপস্থিতি থাকছে। আবার বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কর্মহীন মানুষের সংখ্যাও দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় ত্রাণের চাহিদা বাড়ছে। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা কাজ করছেন। ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো. মোস্তাফিজুর রহমান পিএএ সমকালকে বলেন, এ পর্যন্ত মাঠ প্রশাসনের ২১ কর্মকর্তা ও ৮৬ কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে দুদকের একজন কর্মকর্তা এবং নারায়ণগঞ্জ ও সিরাজগঞ্জ জেলার দু'জন কর্মচারী মারা গেছেন। তিনি বলেন, ঢাকা বিভাগের চিত্র ভিন্ন। এখানে আমাদের চ্যালেঞ্জ সবচেয়ে বেশি। সারাদেশে করোনায় আক্রান্তদের ৮৪ ভাগই ঢাকা মহানগর ও ঢাকা বিভাগের। রাজধানীতে ঘনবসতি এবং ২৩টি বস্তিতে এক লাখ ১৩ হাজার পরিবারের বাস। তারপরও প্রশাসন, সেনা ও পুলিশের সমন্বয়ে সুচারুভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করছেন। টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, জেলা পর্যায়ে একটি বড় সমস্যা হচ্ছে কারও করোনা হলেও সামাজিক নানা কারণে বলতে চান না। অনেকে বিভিন্ন জেলা থেকে মেইন সড়ক বাদ দিয়ে নদী ও জমিনের আইল দিয়েও গ্রামের বাড়িতে চলে যাচ্ছেন। পাশাপাশি মধ্যবিত্তরা টেলিফোন করলে বা খোঁজ পেলে ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে গোপনে ত্রাণসামগ্রী পাঠানো হচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাধারণ মানুষের সঙ্গে সব সময় মিলেমিশে কাজ করতে হচ্ছে, ঝুঁকি বাড়ছে। ঢাকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ওএমএস কার্যক্রমের পরিধি আগের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছে। এসব কার্যক্রমও মাঠ পর্যায়ে প্রশাসনের কর্মকর্তারা কঠোরভাবে মনিটর করছেন।

  • সর্বশেষ
  • আলোচিত
  • নির্বাচিত
আরও ...
অনুষ্ঠানাদি
  • কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানাদি
  • মাঠ প্রশাসনের অনুষ্ঠানাদি
প্রশাসন বার্তা ম্যাপ
অনুসন্ধান
প্রশাসন বার্তা আর্কাইভ
অনুসন্ধান করুন